দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ও অনুষ্ঠিতব্য পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে উহার ‘মহড়া’ হিসাবে দেখিতে চাহিয়াছিলেন অনেকে। এই দফায় তাঁহাদের নিরাশ হইতে হইবে বৈকি। তবে সংশোধনের সময় এখনও ফুরায় নাই।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বারংবার প্রত্যয় ব্যক্ত করিয়া আসিতেছিল। গত বৎসর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন প্রথম দফায় বাতিল করিবার মধ্য দিয়া ইসি সাময়িক হইলেও আস্থা ও আশা জাগাইতে পারিয়াছিল। এদিকে দৃশ্যত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপে ক্ষমতাসীন দলও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়া আসিতেছিল। কিন্তু গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন সম্পন্ন হইবার পর নাগরিকের প্রত্যাশা এবং ক্ষমতাসীনদের প্রতিশ্রুতি যুগপৎ ভঙ্গ হইয়াছে।
গাজীপুরে নির্বাচন কমবেশি সুষ্ঠু হইয়াছে। প্রচারণাকালে হামলা ও বাধাদানের অভিযোগ থাকিলেও ভোটের দিন ভোটারগণ অবাধে ভোট দিতে পারিয়াছেন। ইহা কি এই কারণে যে, প্রধান দুই প্রার্থীই চূড়ান্ত অর্থে ক্ষমতাসীন দলভুক্ত? বরিশালে ভোটের দিন বাহিরে ক্ষমতাসীন দলের মারমুখী আচরণ এবং ভোটকেন্দ্রের ভিতরে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সেই প্রশ্ন আরও বড় করিয়া সামনে আনিল। খুলনায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোট প্রদান সম্ভব হইলেও ভোটের হার লইয়া ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠিয়াছে। সমকালের প্রতিবেদন দেখাইয়াছে, নির্বাচনী সিটিগুলিতে অন্য অঞ্চলকে বঞ্চিত করিয়া লোডশেডিংমুক্ত রাখা হইয়াছিল। ইহা ভোটারদের প্রভাবিত করিবার শামিল।
তবে স্বীকার করিতে হইবে, তিন সিটি করপোরেশনে ভোটার আকর্ষণ করিতে নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীন দলের প্রচেষ্টা কম ছিল না। কিন্তু গাজীপুর বাদে অপর দুই এলাকায় যেই পরিস্থিতি দেখা গিয়াছে, উহাতে ভোটারগণ নিরুৎসাহ বোধ করিতে বাধ্য। যাঁহারা ভোটকেন্দ্রে গিয়াছেন, তাঁহাদের সকলে যে স্বস্তিতে ভোট দিতে পারেন নাই, সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাহা স্পষ্ট। গাইবান্ধা কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনের ন্যায় এই নির্বাচনেও কোথাও কোথাও ইভিএম বুথের নিকট ‘ভূত’ দেখা গিয়াছে। বুধবার সমকালের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত বিশেষজ্ঞগণের এই অভিমতের সহিত আমরা একমত, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বর্জনের কারণে সিটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা লইয়া আগেই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু সেই ‘একতরফা’ নির্বাচনও ইসি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করিতে পারে নাই।
আমরা মনে করি, সিটি নির্বাচনের এই অনাস্থা ও নিরাশাজাগানিয়া চিত্র দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য স্বস্তিকর ও স্বাস্থ্যকর হইতে পারে না। প্রধান বিরোধী দলগুলির নির্বাচন বর্জনের মুখে সবেধন নীলমণি বিরোধী দল ইসলামী আন্দোলন পাঁচ সিটি নির্বাচনেই প্রার্থী দিয়াছিল। কিন্তু বরিশাল ও খুলনায় নির্বাচন পরিস্থিতি দেখিবার পর তাহারাও রাজশাহী ও সিলেটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়াছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এই চিত্র নিঃসন্দেহে ‘ওয়েক আপ কল’ বিবেচিত হওয়া উচিত। এখন সেই ডাকে ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশন সময়মতো জাগিতে পারিবে কিনা, উহাই দেখিবার বিষয়।