‘থাকতে রতন ঘরে, এ কি বেহাত আজ আমারি’– ফকির লালন সাঁইয়ের কথাটা বাংলাদেশের অনেক মা ও শিশুর বেলায় সত্য। মায়েরা ক্রমশ শিশুদের কৌটার দুগ্ধ বা ফর্মুলা দুগ্ধে অভ্যস্ত করাইতেছেন। শিশুর বয়স ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নাই, অন্য কিছুর দরকারও নাই। ইহা মাতৃদুগ্ধ বিকল্প আইন, ২০১৩-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইহাই বিজ্ঞানের পরামর্শ।
বুধবারের সমকালের বিশেষ প্রতিবেদন জানাইতেছে, মাত্র ১৫ শতাংশ মা শিশুদের শুধু বুকের দুগ্ধ খাওয়ান। অন্তত ৬০ শতাংশ মা বুকের দুগ্ধের পাশাপাশি কৌটার দুগ্ধ খাওয়ান। ২৫ শতাংশ মা পুরোপুরি কৌটার দুগ্ধের উপর নির্ভরশীল। চিত্রটি ভয়াবহ। কারণ, কৌটার দুগ্ধ শিশুদের মোটা করে বটে, কিন্তু ক্ষতি করে কিডনির। তাহাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়; অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের আশঙ্কাও বাড়িয়া যায়। এর কুপ্রভাব চলিতে পারে সমগ্র জীবন। অথচ কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ফাঁদ, কতিপয় চিকিৎসক ও নার্সের অপবুদ্ধিতে এই ক্ষতি আমরা করিয়া আসিতেছি।
মাতৃদুগ্ধের অ্যান্টিবডি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ হইতে শিশুকে রক্ষা করে। মাতৃদুগ্ধে পুষ্ট শিশুর বুদ্ধি কৌটার দুগ্ধ খাওয়া শিশুদের তুলনায় ৯ গুণ হইয়া থাকে। অনেক মা-বাবা বিশ্বাস করিয়া থাকেন, শিশু মোটাতাজা হইলেই স্বাস্থ্যবান। অতএব সমাধান হইল কৌটার দুগ্ধ! অথচ বিশেষজ্ঞরা বলিয়া আসিতেছেন, শিশু পাতলা হইলেও প্রাণবন্ত ও খেলাময় থাকিলেই সে সুস্থ। মাতৃদুগ্ধে প্রায় ২০০ উপাদান আছে, যাহা অন্য দুগ্ধে নাই। ইহা ছাড়া শিশুকে বুকের দুগ্ধ পান করাইলে মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে। উপরন্তু মায়ের সঙ্গে শিশুর আত্মার বন্ধন তৈরি হয়। কৌটার দুগ্ধে আসক্তির জন্য ভুল ধারণা যেমন দায়ী, তেমনি চিকিৎসক, নার্স ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দৌরাত্ম্যও দায়ী। এই দায় সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এড়াইতে পারে না। গণমাধ্যমে যথেষ্ট প্রচারের ব্যবস্থা করা সরকারেরই দায়িত্ব।