রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন

দানাদার খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ড

ইফতেখার মাহমুদ
  • আপডেট সময়ঃ শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪
  • ৬২ পঠিত

দেশে গত বছর দানাদার খাদ্যের উৎপাদনে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ধান, গম, ভুট্টা মিলিয়ে মোট উৎপাদিত হয়েছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার টন। গত এপ্রিল থেকে চলতি জুন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগ সত্ত্বেও এ বছর বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ৫ জুন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ইতালির রোম থেকে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে দেশের খাদ্য নিয়ে একটি সংকটের দিকও তুলে ধরা হয়েছে। গত দুই বছরে দেশে প্রয়োজনীয় খাদ্যের আমদানি কমেছে। সামগ্রিকভাবে দেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৯ লাখ।

এফএওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে যে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে, তার মধ্যে শুধু ধান ৫ কোটি ৮৬ লাখ টন। ভুট্টা ৪৭ লাখ টন। আর গম ১১ লাখ টন উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশে মোট দানাদার খাদ্য উৎপাদনে রেকর্ড।

এফএওর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৬ কোটি ৯ লাখ ২১ হাজার টন দানাদার খাদ্য উৎপাদিত হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৬ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার টন হয়েছে।

দেশে চলতি বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহের পর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত। জুনের শুরুতে সিলেটে হঠাৎ বন্যা। পরপর এসব দুর্যোগের আঘাত সত্ত্বেও চলতি বছর বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশে এরই মধ্যে বোরো ধান উঠে গেছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবং ধানের দাম ভালো হওয়ায় এবার বেশি বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে। দেশে ধানের মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশই আসে বোরো থেকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুনের শুরুতে বর্ষা আরম্ভ হওয়ায় এবং বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় আমন ধান চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে। তাই ভালো উৎপাদনের আশা করা যায়। দেশের মোট ধান উৎপাদনের ৩৫ শতাংশ আসে আমন মৌসুম থেকে।

বাংলাদেশ ভুট্টার মোট উৎপাদনের ৮৫ শতাংশই আসে ভুট্টা চাষের শীতকালীন মৌসুম থেকে। গত এপ্রিলে ভুট্টা ঘরে তুলেছেন চাষিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার ভুট্টার উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ভুট্টা রোপণের সময়টায় এবার দাম ভালো ছিল। ফলে কৃষকেরা বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন।

বাংলাদেশে এবার গমের উৎপাদন অন্যান্য বছরের মতোই হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত এপ্রিলে গম ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা। এবার ১১ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে।

আমদানি পরিস্থিতি

দেশে বছরে যে পরিমাণ খাদ্য আমদানি হয়, তার বড় অংশ হচ্ছে গম। এর বাইরে সামান্য চাল, ভুট্টা ও অন্যান্য খাদ্য আমদানি হয়। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ৭১ লাখ টন দানাদার খাদ্য আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। খাদ্য আমদানির আর্থিক সক্ষমতা কমে আসায় এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ নিয়ে টানা দুবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমদানি কম হলো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ডলার–সংকটের কারণে খাদ্য আমদানি কম হয়েছে। তার পরও ২০২৪ সালে মোট ৪ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাল ও ভুট্টার দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এই বাড়তি দামের কারণে কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে উৎপাদন বেড়েছে। আর আমদানি কম হওয়া সত্ত্বেও দেশে চালের কোনো সংকট হয়নি।

তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন এবং চলতি বছরের অর্ধেক সময়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকায় দেশে খাদ্য প্রাপ্যতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি

চলতি বছর বাংলাদেশে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর) ১ কোটি ৬৫ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেদনে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা নিয়ে করা ধারাবাহিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ‘আইপিসি-বাংলাদেশ’–এর এপ্রিলের সমীক্ষা থেকে। এতে দেখা যায়, আগের জরিপের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) চেয়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা থাকা মানুষের সংখ্যা ৯ লাখ বেড়েছে।

বিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা এবং বিদেশি খাদ্যসহায়তা দরকার—এমন ৪৫টি দেশের তালিকা চলতি মাসে প্রকাশ করেছে এফএও। সেই তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে।

বাংলাদেশে খাদ্য নিয়ে সংকটে ভোগা মানুষের সংখ্যা এখনো বেশি থাকার মূলত দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে এফএওর প্রতিবেদনে। প্রথমত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাধা বা সমস্যা। ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকার কারণে খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আর্থিক ও খাদ্যে চাপ তৈরি করছে। এদের খাদ্যের জোগান দিতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিতে হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সাত্তার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, শুধু দানাদার খাবারই নয়, সবজি, মাছ, ডিম ও মুরগির মতো খাদ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ এগোচ্ছে। দেশের খাদ্য পরিস্থিতি ও বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে বাংলাদেশকে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

সূত্র: প্রথমআলো

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ
All rights reserved - Sukhabor © 2023
Designed by BLACK IZ LIMITED